একটা প্রতিষ্ঠানের কাজকে সুষ্ঠুভাবে বিভাজন করে বিভিন্ন বিভাগ ও উপবিভাগ সৃষ্টি, প্রতিটা বিভাগ ও উপবিভাগের কর্তৃত্ব ও দায়িত্ব নির্দিষ্টকরণ এবং ওপর থেকে নীচ পর্যন্ত একের সাথে অন্যের সম্পর্ক প্রতিষ্ঠার কাজ সংগঠন নামে পরিচিত । এরূপ সম্পর্ক সৃষ্টির ফলে তা নিঃসন্দেহে একটা কাঠামোর রূপ লাভ করে । যেখানে শীর্ষ পর্যায়ে একজন মুখ্য নির্বাহী থাকেন এবং তা যতই নিচের দিকে বিস্তৃত হয় ততই তা একটা পিরামিডের রূপ লাভ করে । এরূপ কার্য বিভাজন, দায়িত্ব নির্দিষ্টকরণ ও সম্পর্ক প্রতিষ্ঠায় ভুল হলে বাহ্যিক দিক থেকে তা অনেক সময় বোঝা না গেলেও কার্য পরিচালনায় যেয়ে ভুল-ত্রুটি ধরা পড়ে। যা সংশোধন কষ্টসাধ্য হয়ে দাঁড়ায় । বিষয়টি ইঞ্জিন তৈরি বা সংযোজনের মত । স্টার্ট দিলেই ধরা পড়ে তা কতটা যথার্থ । ক্লাব সংগঠনের কাঠামো দিয়ে ব্যবসায় প্রতিষ্ঠান চলে না । ছোট প্রতিষ্ঠানের কাঠামোতে বড় প্রতিষ্ঠান চালানো যায় না । উৎপাদনধর্মী প্রতিষ্ঠান চালাতে সংগঠন কাঠমোকে সেভাবেই গড়ে তুলতে হয়। তাই এরূপ কাঠামো গড়তে এর উদ্যোক্তা বা শীর্ষ নির্বাহীদের নানান বিষয় গুরুত্বের সাথে বিবেচনা করার প্রয়োজন পড়ে । নিম্নে এরূপ বিবেচ্য বিষয়সমূহ তুলে ধরা হলো:
১. উদ্দেশ্য (Objectives) : সংগঠন কাঠামো প্রণয়ন করার পূর্বে প্রতিষ্ঠানকে তার উদ্দেশ্য নির্ধারণ করতে হয় অতঃপর উদ্দেশ্য বিবেচনায় নিয়ে যথাযথভাবে কার্যবিভাজন এবং প্রয়োজনীয় বিভাগ ও উপবিভাগ খুলতে হয় । একটি ক্লাবের সংগঠন কাঠামো তার উদ্দেশ্যের কারণেই এক ধরনের হয় । উৎপাদনধর্মী প্রতিষ্ঠানের সংগঠন কাঠামোও উদ্দেশ্য বিবেচনায় ভিন্ন ধরনের হয়ে থাকে ।
২. দক্ষতা (Efficiency) : সংগঠন কাঠামো এমনভাবে তৈরি করা আবশ্যক যাতে ন্যূনতম সামর্থ্য ও অর্থ ব্যয়ে পূর্ব পরিকল্পিত লক্ষ্যসমূহ অর্জন করা যায়। এক্ষেত্রে প্রতিটি উপাদান যাতে দক্ষতার সাথে কার্য সম্পাদন করতে পারে সংগঠন কাঠামো প্রণয়নে তা নিশ্চিত করারও প্রয়োজন পড়ে। একজন উর্ধ্বতনের সরাসরি কর্তৃত্বাধীন এমন সংখ্যক অধস্তন রাখা উচিত যাদের কাজকে তিনি সুষ্ঠুভাবে তদারক করে নিজস্ব দক্ষতার পরিচয় দিতে পারেন ।
৩. নির্দিষ্টতা (Specification) : সংগঠনের আসল উদ্দেশ্য সম্পর্কে প্রতিষ্ঠানের প্রত্যেক কর্মচারীর স্পষ্ট ধারণা থাকা উচিত । এ ব্যাপারে তাদের দায়িত্ব ও কর্তব্য কতটুকু তাও স্পষ্ট থাকতে হবে। এজন্য প্রত্যেকটি বিভাগ, উপবিভাগ ও ব্যক্তির কাজকে সঠিকভাবে নির্দিষ্ট করা প্রয়োজন । প্রত্যেকের দায়িত্ব-কর্তৃত্বও সঠিকভাবে চিহ্নিত করা দরকার। সংগঠন কাঠামো প্রণয়নের সময় এ বিষয়টি বিশেষভাবে নজরে রাখা একজন সংগঠকের কর্তব্য ।
৪. বিশেষজ্ঞতা (Specialization) : সংগঠন কাঠামো এমনভাবে তৈরি করা উচিত যাতে এর প্রত্যেক ব্যক্তি, বিভাগ ও উপবিভাগ বিশেষজ্ঞতা অর্জনের সুযোগ পায় । এ জন্য কার্যাদি এমনভাবে ভাগ করা প্রয়োজন যাতে একজন কর্মীকে একটিমাত্র কাজই করতে হয় বা একটি বিভাগ একই ধরনের কার্য সম্পাদন করে । আর এটা সম্ভব হলে ব্যক্তি বা বিভাগের পক্ষে ঐ কাজে বিশেষ জ্ঞান ও দক্ষতা অর্জন করা সম্ভব হয়ে থাকে ।
৫. ভারসাম্য (Balancing) : সংগঠনের সার্বিক উন্নয়নের জন্য প্রতিষ্ঠানের সকল বিভাগ ও উপবিভাগের কার্যাবলির মধ্যে যতদূর সম্ভব সমতা ও ভারসাম্য বজায় রাখা উচিত। কোনো বিভাগের কাজ বেশি হলে সেখানে বেশি জনশক্তি নিয়োগ করা প্রয়োজন । আবার কাজের পরিমাণ কম হলে জনশক্তিও কম রাখা দরকার । এমন যেনো না হয় যে কোনো বিভাগ বা এর কর্মীদের কাজ নেই আবার কোনো বিভাগের কর্মীরা কার্যভারগ্রস্ত ।
আরও দেখুন...